- রাবারকে বলা হয় সাদা সোনা। এই রাবার পাওয়া যায় রাবার গাছের রস থেকে। রাবার গাছ থেকে এক ধরনের সাদা কষ বের হয় যা প্রসেসিং করে রাবার তৈরি করা হয়। বিশেষ করে বিশ্বের নাতিশীতোষ্ণ দেশ গুলোতে রাবার চাষ হয়। এটি একটি কৃষিভিত্তিক শিল্প।
বাংলাদেশে রাবার চাষ এখন খুবই লাভজনক ও সম্ভাবনাময় শিল্প হওয়ার এখন অনেক অঞ্চলে রাবার চাষ হয়। বাংলাদেশের ফেনী জেলার একটি উপজেলা পরশুরামে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে রাবার বাগান।
ফেনীতে পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামে হাজী মোহাম্মদ মোস্তফার উদ্যোগে রাবার বাগান গড়ে উঠেছে।
২০১০ সালে হাজী মোহাম্মদ মোস্তফার মালিকানাধীন প্রায় ২৫ একর জায়গায় ৮ হাজার রাবার চারা রোপন করা হয়। পরিকল্পিত ভাবে লাগানো গাছগুলো দীর্ঘ ৮ বছর পরিচর্যা করার পর কষ আহরন করা অবস্থায় পৌছায়।
বাগানের রাবার গাছগুলোতে লাগানো থাকে ছোট ছোট পাত্র। সেই পাত্র গুলো ধীরে ধীরে ভরে যায় রাবারের কষে। পাত্রটি সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর শ্রমিকরা রাবার সংগ্রহ করেন।
একজন শ্রমিকের কাছ থেকে জানা যায় সারা বছরই রাবার চাষ চলে। তবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি এই চার মাস রাবার উৎপাদনের ভরা মৌসুম। শীতে কষ আহরন বেশি হয় বর্ষায় কমে যায়।
রাবার বাগান থেকে কষ আহরন করে শুকনো রাবারের শীট বানাতে সর্বোচ্চ ৭ দিন সময় লাগে।
এরপর রোলার মেশিনের সাহায্যে কষ থেকে পানি বের করে ড্রিপিং শেডে শুকিয়ে ধুমঘরে তা পোড়ানো হয়। ওই প্রক্রিয়া শেষে রাবারের ৫০ কেজি ওজনের বান্ডিল গুদামজাত করা হয়।
হাজি মোঃ মোস্তফা জানান কষ সংগ্রহের জন্য আড়াই হাজার গাছে পাত্র বসানো হয়েছে।কষ সংগ্রহের জন্য টেপিংয়ের কাজটা সূর্যদয়ের আগেই করতে হয়। কারন সূর্যের আলো না থাকলে কষ নালীতে কষ প্রবাহ চালু থাকে। সূর্যের তাপ বাড়ার সাথে সাথে কষ নালীগুলো সংকুচিত হয়ে যায় । ফলে কষ নালিতে কষ প্রবাহে বাধা প্রাপ্ত হয় বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন রোপনের পর ৩০-৩৫ বছর পর্যন্ত রাবার গাছ গুলো নিরবিচ্ছিন্নভাবে কষ দিয়ে থাকে। ৩৫ বছর হলে গাছের অর্থনৈতিক জীবন চক্র শেষ হয়ে যায়। এসব গাছ থেকে গড়ে ৫-৮ ঘনফুট গোল কাঠ পাওয়া যায়।
হাজি মোস্তফা জানান আরো জানান, গোড়া থেকে ৭০-৭৫ সেমি পর্যন্ত গাছের চারিদিকে কাটা হয় কাটা অংশের নিচে একটি মাটির তৈরি পাত্র বসিয়ে দেওয়া হয়। সে বাটিতে গড়িয়ে পরে কষ। এ বাগান থেকে গড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩০০০ লিটার রাবার পাওয়া সম্ভব। একটি গাছ থেকে দৈনিক প্রায় ৫০০ গ্রাম রাবার পাওয়া সম্ভব।
প্রতি লিটার রাবারের মূল্য ১৫০-২০০ টাকা বিক্রি হয়। কষ সংগ্রহ ও রাবার চাষে ২০-২৫ জন শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। মোস্তফা কামালের ছেলে জানান তাদের বাগান থেকে রাবার কিনে নেয় একটি কোম্পানি । তারা প্রথম চালানে ২ টন ১শ ৩০ কেজি নিয়েছেন। বিক্রিত রাবারের মূল্য ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
পরশুগ্রাম উপজেলার কৃষি অফিসার এদিকে নতুন উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বলেন- এটি একটি লাভ জনক কৃষিভিত্তিক শিল্প।
যা যে কেউ উদ্যোগ হিসেবে নিতে পারেন এতে কৃষি বিভাগ থেকে রাবার বাগানের জন্য সব ধরনের প্রযুক্তি সুবিধা দেওয়া হবে।
এছাড়াও তিনি বলেন ফেনীতে আর কোথাও রাবার বাগান দেখা যায় না। একমাত্র জয়ন্তিনগর গ্রামেই ব্যাক্তি উদ্যোগে এই বাগানটি গড়ে উঠেছে যা অনেক সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় অনেকেই রাবার বাগান করতে উৎসাহিত হয়েছেন। তাছাড়া রাবার দিয়ে হরেক রকম পন্য তৈরি হয়।যেমন- রাবার ব্যান্ড, ইরেজার, সার্জিক্যাল নল, গ্লোভস,বাস্কেট বল, ভলিবল,রাবার কেডস, ওয়েলকাম মাদুর, রেইনকোট, পুকুরের লাইনার, খেলনা, গরম জলের বতল, একুরিয়াম পাইপ ইত্যাদি ছাড়াও আরো অনেক পন্য রাবার দিয়ে তৈরি।
তবে এই রাবার বাগান যে শুধু কৃষিশিল্প সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে তা নয়, এটি অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও ধারন করে। রৌদ্রউজ্জ্বল দিনে রাবার বাগানের উপর দিয়ে সবুজ পাতার ফাঁকে রোদের ঝিকিমিকি পর্যটকদের হাতছানি দেয়। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে নানা সাজে সেজে ওঠে রাবার বাগান।
বর্ষায় চারিদিকে সবুজে ভরে উঠে
আবার বসন্তে পাতা ঝড়ার সময় রাবার বাগানের সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবেন।