ভ্রমণ পিয়াসী মানুষের এতো এতো ছবি দেখে আজ বারবারই মনে হচ্ছিল আমার মা ,মাটি নিয়ে না লিখলেই না ।দেশ ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন ছবি দেখে বারবারই মনে পড়ছিলো শাল বনের সেই ঝরা পাতার সৌন্দর্য ও গন্ধের কথা ।সামারে যখন বিদেশের গাছগুলোয় লালচে পাতা দেখি সেখানে কল্পনা করে ফেলি একটা সাদা শাড়ি ও আমাকে ।এ ভাবনা অনেকের মনেই আসে , কিন্তু হায় ইচ্ছে হলেও সব সুযোগ কি আর মেলে !!
তবে চাইলেই কিন্তু বাংলাদেশে এই সুযোগ আমরা পেতে পারি মাঝে একদিনের ট্যুরে। ।ইয়েসসসস আমাদের দেশেও আমরা এই লাল পাতার বন দেখতে পাই ।টাংগাইল জেলার মধুপুর উপজেলা কে ভাওয়াল ধরা হয় ।টাংগাইল জেলা সদর থেকে এই ভাওয়াল গড়ের দুরত্ব প্রায় ৪৭ কিলোমিটার । মধুপুর জাতীয় উদ্যান এর আয়তন প্রায় ৮৪,৩৬৬ হেক্টর ।যাকে বলা হয়, বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ।
মধুপুরের পথ ধরে যখন আপনি ভাওয়াল গড়ের দিকে এগিয়ে যাবেন ,৩ কিলোমিটার পরই আপনি দেখতে পাবেন বিএডিসি ফার্ম ।তার গেইট থেকেই থাকে আকর্ষণ আর আকর্ষণ। বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ দিয়ে সাজানো রয়েছে গেইটের দুইদিক । পাশেই রয়েছে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ এবং ভেতরের কিছুটা এরিয়া জুড়ে রয়েছে একটা পুকুর। যেখানে বসে আপনি ফ্রেস অক্সিজেন তো পাবেনই সাথে যদি একটুও ক্লান্তি থাকে সেটা নাই হয়ে যাবে একদম ।।
বিএডিসি থেকে বের হয়ে ৫ কিলোমিটার পরই আপনি দেখতে পাবেন বিশাল এক আনারসের বাজার । যেখানে শুধুমাত্র ফ্রেশ আনারসই না আপনি পাবেন ফ্রেস কলা, পেঁপে,ড্রাগন ,থা.বালচু ,মাল্টা সহ মধুপুরের সব ফ্রেস ফল গুলো ,আর জানেন তো ? টাংগাইলের কৃষিতে মধুপুর সেরা ।
জলছএ বাজারের ফ্রেস ফল খেয়ে আপনি রওনা দিবেন ভাওয়াল গড়ের জন্য ।এর মাঝে যাএা পথেই আপনি দেখার মতো ছোট ছোট ক্যাফে পাবেন ৪-৫ টা ।যেমন ধরুন, শুধুমাত্র বাঁশ ও সনের তৈরি ক্যাফে -ক্যাফে পাহাড়িয়া ,গোলপাতার কুঞ্জ সহ বেশ কয়েকটা ।ভাওয়ালের চারদিক আপনি যতো দেখবেন সৌন্দর্য যেনো বাড়তেই থাকবে ।রাস্তার দুদিকে থাকে সবুজ আর সবুজ,জারুল গাছের বেগুনি ফুল গুলো যেনো আরও মন মাতিয়ে রাখে ।
এছাড়াও মে মাসের দিকে গাছের পাতা গুলো ঝরে যায় ।গাছে কিছুটা লালচে পাতা দেখা যায় এবং মাটিতে থাকে ঝড়া পাতা গুলো।গারো নারীদের নিজস্ব কাজের সৌন্দর্য যেনো আরও খুশি করে দেয় একজন ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে।
এই বনের প্রধান আকর্ষণ হলো শাল গাছ । এছাড়াও রয়েছে বনের পশুপাখির কোলাহল ,গারো ,কোচ সম্প্রদায়ের বসবাস ।মৌসুমে এই বনে হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও । এখানে গিয়ে শুধুমাত্র দেশি মানুষই প্রেমে পড়ে না ,প্রেমে পড়েছিলেন একজন বিদেশি এক ডাক্তার পরিবারও ।যারা এখন নিজেদের পরিবার নিয়েই বসবাস করছেন বনে এছাড়াও চালিয়ে নিচ্ছেন একটি হাসপাতাল ।
চারদিকে সবুজের সমারোহ এর মাঝে রসুলপুর রেঞ্জ কার্যালয় এর অপজিটে মহুয়া কর্টেস নাম দেখলেই ইচ্ছে করে একটাবার ভেতরে যাই , এখানে না গেলে পেটে কামড় দিবে না দেখতে পারার ক্ষুধায় । চারদিকে আছে শালবন , পাখির কলকাকলি এর মাঝে আবার ইটবিছানো কাঁচা রাস্তা ।শহুরের চার দেয়াল থেকে বেরিয়ে এসে এটা যেনো স্বপ্নই মনে হবে।ভেতরেই রয়েছে দোখলা পিকনিক স্পট ।যাকে একসময় বিমানঘাঁটি ও বলা হতো ।
সব শেষে আপনি ফিরে আসতে পারেন মহুয়া কর্টেস এর দিকে। যেখানে টাওয়ারে উঠে আপনি একনজরে পুরো বন দেখতে পারেন।এছাড়াও একদিনের ট্যুরে আপনি আরও কিছু জায়গা দেখতে পারেন ।কারণ আমাদের মধুপুর শুধু নামেই সেরা না সৌন্দর্যেও সেরা ।
⭐ একদম মধুপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু এই ঘুরাঘুরি খুব সহজ করে লিখবো যাতে ঘুরে দেখতে সুবিধা হয় ।
👉 কাকরাইদ বিএডিসি ফার্ম
এটা মধুপুর সদর থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে । যেকোনো অটো / সিএনজিকে বললেই আপনাকে নিয়ে যাবে ।বিকাল টাইমে গেইট অপেন থাকে।উপরে বিএডিসির সৌন্দর্য নিয়ে তো বললামই। বিএডিসি তে ঢুকার জন্য কোনো পেমেন্ট দিতে হয় না কোথাও ।সবার জন্য উন্মুক্ত এটা ।
👉 ক্যাফে পাহাড়িয়া
কাকরাইদ বাজার থেকে এগিয়ে পায়ে হেঁটে দুমিনিটের রাস্তা। পুরোটা বাঁশের তৈরি ক্যাফে ।নাস্তা করা ও ফটোগ্রাফির জন্য কাছেই বেষ্ট একটা জায়গা ।
👉 হাওদা বিল
ক্যাফে পাহাড়িয়ার রাস্তা ধরেই জলছএ মিশনারিজ এর পথের শেষে রয়েছে এই বিল ।বর্ষায় যা চোখে দেখার মতো ।একদম মন মাতিয়ে রাখে ।লাষ্টবার আমরা গিয়ে চারদিকে পানি আর নৌকা ছাড়া কিছুই দেখি নাই বললেই চলে,এটা বর্ষায় পারফেক্ট।
👉 জলছএ বাজার
জলছএ বাজার একদম রাস্তার সাথেই তাই এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই ,টুরিষ্ট রা এখানে ২ মিনিটের জন্য হলেও থেমে আনারস খেয়ে যান।
👉 পীরগাছা রাবার বাগান
রাবার বাগান টা একটু ভেতরের দিকে হলেও এর সৌন্দর্য সবার মন কেড়ে নেয় ।মে মাসে এখানে না গেলে আমার পেটে ক্ষুধা থেকেই যায় ,কতোবার গিয়েছি হিসেব নেই , খুবই সুন্দর একটা জায়গা ।
👉বন পার্ক
একদম ভাওয়াল গড়ের কাছে এটা । ভেতরে বিভিন্ন ফুলের গাছ ও ছোট ছোটসনের তৈরি ঘর । পুরোপুরি গ্রামের ফিল পাওয়া যায় এখানে।
এছাড়াও সবশেষে তো ভাওয়াল গড় রইলোই ।
অনেক আপু ও ভাইয়ারা আছেন যারা পরিবার নিয়ে ছোট একটা ট্যুর দেওয়ার মতো কোনো পরিবেশ পায় না ব সময়েই হয়ে উঠে না ।সেইক্ষেএে এই মধুপুর ভাওয়াল গড়ের ট্যুর একদিনের ট্যুর হিসেবে হতে পারে বেষ্ট অপশন । যেখানে সিকিউরিটি নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, নেই কোনো সমস্যা ।
হ্যাপি ট্যুর ❤️
আমি আমিনা আতকিয়
অপরাজিতা