সারা বাংলাদেশে মাত্র ১০ টা রেশম গুটি তৈরীর সেরিকালচার কেন্দ্র আছে। তারমধ্যে একটা দিনাজপুরে। সিল্ক বলতে আমরা শুধুই রাজশাহী সিল্ককেই চিনি। কিন্তু এই সিল্কের কাঁচামালটা যে তৈরী হয় আমাদের দিনাজপুরেই সেটা আমার জন্য একটা চমৎকার একটা খবর ছিলো।
আড়ং থেকে আমরা যেসব সিল্ক পোশাক কিনে থাকি সেগুলো মূলত তৈরি হয় ব্র্যাক সিল্ক থেকে। সারা দেশে মাত্র ১০ টি জায়গায় রয়েছে ব্র্যাক সিল্কের এই সেরিকালচার কেন্দ্র। যেখানে মূলত রেশম পোকা চাষ করে কোকুনে পরিণত করার প্রকৃয়া সম্পন্ন হয়।
বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় যখন আকাশ রৌদ্রজ্জ্বল থাকে তখন ডিম থেকে রেশম পোকা ফোটানোর কাজ শুরু করা হয়। এসব পোকার ডিম অনেক সময় ইন্ডিয়া থেকে নিয়ে আশা হয় বা দেশেই চাষ করা হয়। ডিম থেকে পোকা বের হবার পর তাদের রাখা হয় তুঁতপাতা ভর্তি ট্রের মাঝে এবং দিনে দুবার এদের তুঁতপাতা খেতে দেয়া হয়। ডিম থেকে পোকা বের হয়ে কোকুন তৈরী পর্যন্ত প্রকৃয়াটা চলে ২৫-২৭ দিন। এরপর এসব কোকুন কোয়ালিটি অনু্যায়ী বাছাই করা হয়।
সুতা তৈরীর পূর্বেই এই কোকুন গুলো থেকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো- ১. ফাইন সিল্ক। যেটা সব চেয়ে ভালো কোয়ালিটির। ২. ধুপিয়ান সিল্ক এবং ৩. এন্ডি সিল্ক। সাধারণত রিজেক্ট কোকুন থেকে বানানো হয় এন্ডি সিল্ক।
সুতা তৈরীর কাজ গুলো হয় বিভিন্ন সেন্টারে, রংপুর, নাটোর, মানিকগঞ্জ, বগুড়া সহ আরো বিভিন্ন সেন্টারে পাঠানো হয় এই কোকুনগুলো।
সুতা তৈরীর পর সেগুলো কাপড়ে বোনার জন্য নাটোরে পাঠানো হয়। তারপরে সেগুলো ডিজাইনারের ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে সিল্কের নানান পোশাক তৈরী হয়। যা আমরা আড়ং এর বিভিন্ন আউটলেটের এক্সক্লুসিভ সেক্টরে পাই। রেশমের প্রথম ধাপের পুরোটাই দিনাজপুর জেলার মাঝে হয়। বাকি থাকে শুধু কাপড় বোনা, সেটা হয় নাটোরে। সিল্ক নিয়ে দিনাজপুরে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে কাপড় বোনার প্রকৃটাও দিনাজপুরের মাঝেই করা সম্ভব হবে। রাজশাহী সিল্কের মত একদিন দিনাজপুরে সিল্ক তৈরী হবে। সেটা হয়তো আর বেশি দূরে না।
তবে এটাও সত্য যে দেশের ভিতরে সিল্কের ক্রেতা খুবই কম তাই অনেক সংস্থা রেশম নিয়ে কাজ শুরু করলেও সেটা চালিয়ে যেতে পারে নি। শুধু আড়ং এর ব্র্যান্ড ভ্যালুর জন্যই ব্র্যাক সিল্ক টিকে আছে। সেরিকালচার প্রোজেক্টকে তারা অলাভজনক প্রোজেক্টের আন্ডারে ফেলেছে কারণ টুরিস্টরা সিল্ক পণ্য কিনলেও দেশের মানুষের সিল্কের প্রতি আগ্রহ কম। দেশের মানুষ যখন সিল্কের প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে এই পণ্য কিনবে নিঃসন্দেহে টিকে যাবে আমাদের এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে যাবে রাজশাহী থেকে আরো অনেক জেলায়।
লেখক : তানিয়া ইসলাম মধুবন্তী, স্বত্বাধিকারি : মধুবন্তী।