হুম পাহাড়ের নাম ডিম।দেখতে অনেকটা ডিমের আকৃতির মতো বলে স্হানীয়রা নাম রেখেছেন ডিম পাহাড়। নাম শুনে অবাক হচ্ছেন তাই না??
অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই চলেন আমার সাথে ঘুরে নামের সাথে বাস্তবতা মিলিয়ে নিই…
চলতি পথে আধাঘন্টার ব্যবধানেই তিনি তিন রকের আবহাওয়া লক্ষ্য করা যায় । যাওয়ার পথে হঠাৎ বৃষ্টি, পুরেপুরি মেঘে ঢাকা পথ এবং ঝলমলে রোদ। পশ্চিম আকাশ পরিষ্কার থাকলে তারা পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জলরাশিও দেখা যায়।
ঘনসবুজ পাহাড়ের পাথুরে ঢালে বয়ে চলছে ঝর্ণাধারা। কলকল শব্দে ঝরে এসব ঝর্ণার শীতল জল। অন্যদিকে ডিম পাহাড় এলাকায় দাড়িয়ে ছোঁয়া যায় আকাশের সাদা মেঘ।
হুম,এতোক্ষণ ধরে বান্দরবনের ডিম পাহাড়ের কথায় বলছি।দেখতে ডিমের মতো বলেই স্হানীয়রা নাম রেখেছেন ডিম পাহাড়।
বান্দরবানের আলীকদম এবং থানচি থানার মাঝখানে ডিম পাহাড়ের অবস্থান। বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু সড়ক হিসাবে পরিচিত এই থানচি-আলীকদম সড়ক। এই সড়ক পথেই ডিম পাহাড় এর অবস্থান। অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে এই রাস্তা এবং ডিম পাহাড় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যময় আদিবাসী জীবনধারায় পরিপূর্ণ ডিম পাহাড় দিয়েই আলীকদম ও থানচি থানার সীমানা নির্ধারন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণের ফলে বর্তমানে ডিম পাহাড়ে গমন সহজ হয়েছে।আলীকদম হতে ক্রমশ উঁচু হতে হতে প্রায় ২৫০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত এই পাহাড়ী পথ দিয়ে চলতে চলতে প্রকৃতির যে রূপ চোখে পড়ে তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা কঠিন। ইতিহাসের সাক্ষী হোক কিংবা সৌন্দর্য দর্শন ভ্রমণকারী এখান থেকে ফিরে যান অন্যরকম আত্মতৃপ্তি নিয়ে।
বান্দরবানের অপরূপ প্রকৃতির মাঝে নির্মিত দেশের সবচেয়ে উঁচু ‘আলীকদম-থানচি সড়ক’ এর বর্ণনা কারো পক্ষে সহজে দেয়া সম্ভব নয়। অবর্ণনীয় সবুজ প্রকৃতির মাঝে আরেক বিস্ময় সড়কটির ২২ কিলোমিটার পয়েন্টে অবস্থিত ‘ডিম পাহাড়’। ৩৩ কিলোমিটার সবুজাভ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা সর্পিল পথ।
প্রকৃতির অনাবিল সৌর্ন্দয আর বৈচিত্র্যময় পরিবেশে এ যেন প্রকৃতির দান! পাহাড়ের বুকে ৩৩ কিলোমিটার এ সড়কপথে যাত্রা নয়, বলা যায় রোমাঞ্চও। ডিম পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তাটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। আলীকদম থেকে এই রাস্তা ওপরের দিকে উঠেছে এবং ডিম পাহাড়ের কাছাকাছি রাস্তার উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৫০০ ফুট।
শ্রাবণের এই ঘন বর্ষায় ডিম পাহাড় এলাকাটি থাকে সাদা মেঘে আচ্ছন্ন। যেন মেঘের ওপরে সড়ক! সেখানে গেলে পর্যটকরা পান আকাশের মেঘ ছোঁয়ার অভিজ্ঞতা! বর্ষায় ভ্রমণে রাস্তার অর্ধেকটাজুড়ে সাদা মেঘ আপনার সঙ্গী হবে বারবার। কাছে এসে যেন দূরে চলে যায় মেঘদল। আবার মেঘদল যেন বলে দেয় এখানে পথ হারালে ফিরে যাওয়া হবে কঠিন! ডিম পাহাড় এলাকাটি সবুজের চেয়েও সবুজ।
পাহাড়ি রাস্তার ধারে ধারে ফুটে আছে নানা রঙের পাহাড়ি ফুল। পর্যটকদের যেন মনে করিয়ে দেয় জাতীয় কবির ‘ছন্দে ছন্দে দুলে আনন্দে আমি বন ফুল গো’ গানের কলি। মেঘের ফাঁকে রোদের ঝিলিক বৃষ্টিভেজা ফুলগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে।সৌন্দর্যের জানান দিতে এরা প্রস্তুত যেন।মন ভালো করে দিতে জানে মুহুর্তেই।
১৯৯৯ সালে এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম দুই বছরে মাত্র ৬ কিলোমিটার নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। এরপর সংস্থাটি জানিয়ে দেয়, পাহাড়ের চূঁড়ায় সড়ক বানানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ২০০১ সালে সেনাবাহিনী এ সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পায়। হেলিকপ্টারে করে সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্য পথ নির্ধারণ করা হয়। পাহাড়ের পর পাহাড়ের গা কেটে তৈরি হয় পথ। এ সড়ককে ঘিরে একে একে সন্ধান মিলছে অসংখ্য ঝিরিনির্ঝর, ঝরণা, জলপ্রপাত ও আর সুউচ্চ পাহাড়।
আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণের আগে কক্সবাজার, আলীকদম, লামা ও রুমা থেকে থানচি যেতে হতো বান্দরবান ঘুরে। থানচি থেকে যেতেও একই পথ ব্যবহার করতে হতো। প্রতিবেশী আলীকদম-থানচির দুরত্ব ছিল ১৯০ কিলোমিটার। সড়ক নির্মাণের পর দুই উপজেলার দূরত্ব এখন ৩৩ কিলোমিটার।
ঢাকা-চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজার থেকে বাস করে চকরিয়া বাস স্টেশন নামতে হবে। চকরিয়া থেকে বাসে করে আলীকদম বাসস্টেশন নামতে হবে। সেখান থেকে জীপ গাড়ি ভাড়া নেয়া যায়। অথবা বাস স্টেশন থেকে অটো রিক্সায় পানবাজার এসে ভাড়ায় চালিত মোটর বাইক নিয়ে ডিম পাহাড় যাওয়া যায়। ডিম পাহাড় ঘুরে ১০/১২ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছা যায় থানচি। বান্দরবান থেকে যেতে চাইলে আগে লোকাল বাসে কিংবা চান্দের গাড়িতে করে থানচি বাজার চলে যান। এরপর থানচি বাজার থেকে চান্দের গাড়ি কিংবা মোটরবাইকে করে ডিম পাহাড়।খাওয়ার জন্য ভালো মানের হোটেল ও আছে যেখানে মান সম্মত খাবার পাওয়া যায়।
বর্তমানে আলীকদম-থানচি সড়কটি নিরাপত্তার স্বার্থে এখনো সেনা নিয়ন্ত্রিত। পর্যটকরা আলীকদম থেকে ডিম পাহাড় থানচি যেতে চাইলে আলীকদম জোন সদর হতে পূর্বে অনুমতি নিতে হবে। অন্যথা সড়কের ১০ কিলোমিটারে অবস্থিত থিংকু পাড়া সেনা চেক পোস্টের সেনারা আপনাকে যেতে দিবে না!ডিম পাহাড় বাংলাদেশের বান্দরবান জেলায় অবস্থিত একটি পাহাড়। পাহাড়টি আলীকদম এবং থানচি উপজেলার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। এই পাহাড় দিয়েই দুই থানার সীমানা নির্ধারিত হয়েছে।
এ্যাডভেঞ্চার প্রেমিরা চাইলে নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী এই ভ্রমণের সময়ে ডিম পাহাড় ঘুরে আসতে পারেন।আর আমাদের জন্য নিয়ে আসতে পারেন আপনাদের অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞান।যা পরবর্তীতে অন্যান্য ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য সহায় হবে।
তাহলে চলুন এবার ঘুরে আসি ডিম পাহাড়ে…..
রাহাত সোলতানা
স্বত্বাধিকারী-অভিরুচি বুটিকস